নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ চিকিৎসক সংকটে চরম বেহাল দশায় পরেছে বরিশাল বিভাগের কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। বিভাগের ছয়টি জেলা হাসপাতাল, ৩৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ১ হাজার ১৩১ জন চিকিৎসক পদের ৫৩৮টিই শূন্য এবং বিভাগে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) মঞ্জুরিকৃত ১০২টির মধ্যে ৫৮টি পদ শূন্য রয়েছে। শেবাচিমের অবস্থা আরও করুণ। সেখানকার জনবল কাঠামো ১৯৬৮ সালের ৩৬০ বেড অনুসারে অর্ধেকও নেই। অথচ কাগজে-কলমে এ হাসপাতালটি হাজার বেডে উন্নীত হয়েছে। অথচ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর একমাত্র ভরসাস্থল হচ্ছে শেবাচিম হাসপাতাল।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ বাকির হোসেন জানান, চিকিৎসকের ২২৪টি পদ থাকলেও ১২৭টি পদ এখনো শূন্য। টেকনোলজিস্টের পদ রয়েছে মাত্র ছয়টি, নার্স ব্যতিত অন্যান্য পদের জনবল অর্ধেকও না থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। স্থায়ী চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় বিভাগের মধ্যে একমাত্র আইসিইউ থাকা শেবাচিমে মুমূর্ষ রোগিদের সেবাও চলছে জোড়াতালি দিয়ে। হাসপাতালে মোট ২৮টি আইসিইউ’র মধ্যে করোনায় আক্রান্তদের জন্য রয়েছে ১৮টি।
শেবাচিম কর্তৃপক্ষ জানান, হাসপাতালের শুরুতে আইসিইউ না থাকায় পরবর্তীতে চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ হয়নি। অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক দিয়ে এবং ১০ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ সেবা চালু রাখা হয়েছে। করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউতে ১০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ওয়ার্ড ব্যতীত বাকি ১০টি আইসিইউতে সেবা পাচ্ছে না সাধারণ রোগিরা।
সূত্রমতে, হাসপাতালের ২২টি বিভাগীয় প্রধান পদে একজন করে অধ্যাপক থাকার কথা থাকলেও এ হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র একজন। গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের একাধিক চিকিৎসক পদ শূন্য থাকায় রোগিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সূত্রগুলো আরও জানান, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৯৬৮ সালে ৩৬০ বেড নিয়ে যাত্রা শুরু করার পর পরবর্তীতে কাগজে-কলমে ৫০০ ও হাজার বেডে উন্নীত হলেও রোগী ভর্তি থাকতো প্রায় দুই হাজার। বর্তমানে অন্যান্য ওয়ার্ডের রোগি কমলেও করোনা ওয়ার্ডে রোগিদের চিকিৎসায় ফুটে উঠেছে অসহায়ত্ব। শেবাচিম হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী পাঁচতলার নতুন ভবনের চতুর্থতলা পর্যন্ত ১৫০টি করোনা বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রায় ১২০ জন রোগি।
সেখানকার রোগি ও তাদের স্বজনরা জানান, চিকিৎসক, নার্স কারোর দেখা পাওয়া যায়না। সর্বত্র নোংরা পরিবেশ। করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসার চেয়ে তারা বাসা-বাড়িতেই ভালো ছিলেন। তাই অনেকেই স্বেচ্ছায় করোনা ওয়ার্ড ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, বিভাগের ছয় জেলা ও উপজেলায় যেসব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতাল রয়েছে সেখানে চিকিৎসকের পদের প্রায় অর্ধেক পদ শূন্য রয়েছে। একই সাধে শূন্য রয়েছে নার্স, টেকনোলজিস্টসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ। সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে বরিশালের ৬৫ জন চিকিৎসককে শেবাচিমসহ বিভিন্ন হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য বিভাগে পাঁচ শতাধিক আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা থাকলেও আইসিইউ রয়েছে শেবাচিমের ১৮টি। এছাড়া বিভাগের কোথাও বেসরকারিভাবে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা নেই। চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের বিষয়টি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Leave a Reply